করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে দেশজুড়ে অঘোষিত ‘লকডাউনে’ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। জরুরি সেবা কিংবা প্রয়োজন ব্যতীত জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে রাজধানীজুড়ে। এর মধ্যেই বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্টসস শ্রমিকরা।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর উত্তরা, বিমানবন্দর, বাড্ডা, মিরপুর, দারুসসালামসহ অন্তত ১০টি স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ফলে প্রতিটি স্থানেই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত।
শ্রমিকদের এই বিক্ষোভে সড়কগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ের মতো সব ধরনের যানবাহন চলাচল না করলেও জরুরি পণ্য পরিবহন ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের যানবাহনগুলো দীর্ঘসময় ধরে আটকে থাকতে দেখা গেছে।
বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে রাজধানীর বিমানবন্দর গোল চত্বর ও জসীম উদ্দীন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রেদওয়ানটেক্স অ্যান্ড অ্যাপারেলস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মো. শামীম হোসেন জানান, মালিকপক্ষকে বিক্ষোভের বিষয়টি জানানো হলে তারা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। গার্মেন্টস মালিকপক্ষের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাসে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়েছেন।
রাজধানীর বাড্ডায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শামসুর রিজিয়া ফ্যাশনস লিমিটেডের শ্রমিকরা। তবে বেশিক্ষণ এ বিক্ষোভ স্থায়ী হয়নি। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মাসুম গনির আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করে সড়ক ছেড়ে দেন।
বুধবার সকালে ভাষানটেক থানাধীন কাফরুল এলাকার মিনি সুপার মার্কেটের পাশে চিটাগাং ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা এক মাসের বেতন ও দুই মাসের ওভারটাইমের বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালায় কাফরুল ও ভাষানটেক থানা পুলিশ।
শ্রমিকরা জানান, পুলিশের আশ্বাসে এর আগেও রাস্তায় নেমে ফিরে গেছেন তারা। তবে এবার বেতন-ভাতার সমস্যা মিটিয়ে তারা ঘরে ফিরবেন।
তাদের ভাষ্যমতে, করোনার কারণে গার্মেন্টস বন্ধ। কিন্তু তার আগের বেতন ও ওভারটাইমের বকেয়া মেটায়নি কর্তৃপক্ষ।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিমুজ্জামান জানান, চিটাগাং ফ্যাশন গার্মেন্টসটি ভাষানটেক থানায় পড়েছে। তবে শ্রমিকদের আন্দোলন বিক্ষোভ চলছে উভয় পাশের সড়কে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ভাষানটেক থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইসরাঈল হোসেন জানান, চিটাগং ফ্যাশনস গার্মেন্টসের মালিকের পক্ষে একজন এসেছেন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তাদেরকে সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বেতন-ভাতার দাবিতে মিরপুর থানাধীন দারুসসালাম এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা বুধবার সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। কিন্তু মালিকপক্ষের কোনো সাড়া না পাওয়ায় সর্বশেষ খবর অনুযায়ী শ্রমিকরা এখনো সড়কে অবস্থান করছেন।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান জানান, আকিফ গার্মেন্টস, আরএসএফ ফ্যাশন্স, এমইসি ফ্যাশন্স, লুমিয়া প্রিন্টার্সসহ বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গার্মেন্টস শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে বেতন ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পুলিশের কোনো কথাই তারা শুনছে না। আবার ছোট ছোট কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিকরা একত্রিত হওয়ায় গার্মেন্টস মালিকদের খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই শ্রমিকদের এমন বিক্ষোভ চলছে, যা খুবই বিপদজনক। এ ক্ষেত্রে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
দুপুর ১২টা থেকে মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানায়, বকেয়া বেতন না দিয়েই গার্মেন্টস মালিকরা উধাও হয়ে গেছেন। তাই নিরুপায় হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন।
এদিকে, সম্প্রতি গার্মেন্টস সেক্টরে ছাঁটাই চাকরিচ্যুতি বন্ধ এবং বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।
সম্প্রতি গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন এই বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বিভিন্ন শিল্প অঞ্চলে গার্মেন্টস সেক্টরে প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের ছাঁটাই এবং চাকরিচ্যুতি চলছে। কোনো কোনো কারখানায় শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন থেকে ঠকানোর অসৎ উদ্দেশ্যে লে-অফ-এর নোটিশ দিয়ে কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে। অথচ সরকার গার্মেন্টস মালিকদের জন্য বিরাট অংকের আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রণোদনার আওতায় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপরও দেশের মুনাফালোভী গার্মেন্টস মালিকেরা শ্রমিকদের বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে চাকরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং কারখানা লে-অফ ঘোষণা করছে।